Tuesday, March 28, 2017

‘আমার বুক ফেটে যায়’


মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা মিজু আহমেদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজায় হাজির হয়েছিলেন গুণী নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। এ নির্মাতার হাত ধরেই রূপালি পর্দায় পা রাখেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ও প্রযোজক মিজু আহমেদ।

মিজু আহমেদকে নিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে স্মৃতিচারণ করেন নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

‘‘মিজু রাজনৈতিক একটি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৭৭ সালে আমার বাসার পাশে একটি মেসে থাকত মিজু। ওর সঙ্গে আরো কয়েকজন ছেলে থাকত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে কেবল ঢাকায় এসেছে। একদিন হঠাৎ আমার বাসায় এসে মিজু জানায়, সে সিনেমায় অভিনয় করতে চায়। আমিও তার কথায় রাজি হই। এরপর তাকে বলি, ‘শিল্পী হতে হলে নরম মনের মানুষ হতে হয়, নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়।’ সে আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনে।’’

‘‘একই বছর ‘নদের চাঁদ’ সিনেমার শুটিংয়ের জন্য মানিকগঞ্জে গিয়েছিলাম। এতে এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে দেয়া হয় মিজুকে। যদিও ‘তৃষ্ণা’ সিনেমাটি তার আগে মুক্তি পায়। শুটিংয়ের সময় চার পাঁচদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়। এজন্য শুটিং বন্ধ থাকে। প্রযোজকের কাছে টাকা ছিল না। এজন্য শুটিং তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলেই বেঁচে যায়। যার জন্য প্রযোজকও তাড়া দিচ্ছিল। এক সময় প্রযোজক আমাকে বলেন, ‘ওদের বসায় বসায় খাওয়াই লাভ নাই, ওদের বিদায় করে দাও।’ সুমিতা দেবী, এটিম শামসুজ্জামান, সুচরিতা সবাই ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে পারে। কিন্তু মিজু ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে পারে না। এমন মুহূর্তে মিজু কেঁদে ফেলে। এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমি আর পারব না মনে হয়।’ আমি ওর মাথায় হাত দিয়ে শান্তনা দিই এবং বলি, ‘তুমি পারবে।’ এরপর এক টেকেই পেরে যায় মিজু। ও ওস্তাদ হিসেবে আমাকে খুব মানত। আর অভিনয় করতে গিয়ে কখনো কোনো পরিচালককে অবজ্ঞা করত না। ও শিক্ষিত ছেলে বলে খুব সহজেই বুঝে যেত কিভাবে অভিনয় করতে হবে। এ সিনেমার পর ‘এতিম’, ‘মাসুম’, ‘ঈদ মোবারক’সহ প্রায় আমার পরিচালিত ৪০টি সিনেমায় অভিনয় করে মিজু। ২০০৯ সালে জুনে মুক্তি পায় ‘মা বড় না বউ বড়’ শিরোনামের সিনেমাটি। এটিই মিজুকে নিয়ে আমার শেষ কাজ। এরপর আমিও আর সিনেমা নির্মাণ করিনি। গত তিন মাস আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়নি। ভিলেন হিসেবে অভিনয় করলেও ওর মনটা খুব নরম ছিল।’’

‘‘আমি এক সময় মিজুকে বললাম, ‘অভিনয়ের সূত্রপাত হলো স্ক্রিপ্ট। তাই স্ক্রিপ্ট করার সময় আমার পাশে মিজুকে বসিয়ে নিতাম। বলতাম, ‘এক সময় তুমিও পরিচালক হবে। চিত্রনাট্য নিয়ে অভিজ্ঞতা থাকা ভালো।’ মিজু প্রতিদিন সকাল ১০ টায় আমার বাসায় বসত। এ সময় মিঠুন, সুমন, ফিরোজ, এম হাসানও আমার বাসায় বসত। ওরা নিজে থেকেই ওর ভাবিকে বলত, ‘কালকে কিন্তু ভুনা খিচুরী খাব, এটা খাব ওটা খাব।’ ওরা আমার সন্তানের মতো ছিল। ওদের কথা মনে করলে আমার বুক ফেটে যায়। আমার এই তিন ছেলেকে আমি জানাজা দিলাম।’

0 comments:

Post a Comment

Copyright © 2015 মিডিয়া স্টারস
| Distributed By Gooyaabi Templates